উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রায় চার দশক আগে তৎকালীন সরকার মাগুরা জেলার মহম্মদপুরে তৈরি করেছিল একটি কারাগার। কিন্তু নির্মাণের পর চালু না হওয়ায় কারাগারটিতে কখনোই রাখা হয়নি কয়েদি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় স্থাপনাটি বর্তমানে ‘পরিত্যক্ত’ বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
উপজেলা সদরের বাওইজানি গ্রামে এই উপ-কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছিল। দ্রুত নির্মাণকাজ শেষ হলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রকল্পটির কাজ থমকে গেলে কারাগারটি আর চালু হয়নি।
মাগুরা জেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলা সদর পর্যন্ত আসামি আনা-নেওয়ার ঝামেলা কমিয়ে স্থানীয় বিচারিক কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ১৯৮৫ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকার উপ-কারাগারটি নির্মাণ করে। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে প্রকল্পটির পরবর্তী কার্যক্রম আর আলোর মুখ দেখেনি। উদ্বোধনের আগেই তালা পড়ে যায় ফটকে।
২ দশমিক ৭১ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত উপকারাগার কমপ্লেক্সে পুরুষ কয়েদিখানা, নারী কয়েদিখানা, রান্নাঘর, কার্যালয় ভবন, নিরাপত্তা প্রহরীদের থাকার জায়গা, পাম্প হাউস ও কর্মকর্তাদের একটি আবাসিক কোয়ার্টার আছে। ২০ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী কয়েদির থাকার উপযোগী করে উপ-কারাগারটি নির্মান করা হয়েছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় চার দশক আগে নির্মিত স্থাপনার বেশির ভাগেরই এখন জরাজীর্ণ অবস্থা। ভবনগুলোর পলেস্তারা খসে পড়েছে, দরজা-জানালার কাঠামো নেই।
ভবনটি দেখভালের জন্য প্রশান্ত কুমার নামে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একজন কর্মচারী আছেন। তিনি বলেন, ‘উপ-কারাগারে কর্মকর্তাদের জন্য বানানো কোয়ার্টারে আমি পরিবার নিয়ে থাকছি। ভবনগুলো পরিত্যক্ত হলেও ঝুঁকি নিয়েই থাকছি এবং দেখভাল করছি।’
স্থানীয়দের ভাষ্য, স্থাপনাটি কোনো কাজে আসছে না। শুধু শুধু জায়গা দখল করে আছে। সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে।
মহম্মদপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবদুর রব বলেন, স্থানটি অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হলেও সংস্কার ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও জনবল তাদের নেই। এটি সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে অসহায় দুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ অভিভাবকহীন ছিন্নমূল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। যদিও স্থাপনার বেশিরভাগই এখন পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এমন ২৩টি উপ-কারাগার রয়েছে, যেগুলোর একটিও এখন কার্যকর নেই। পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণী অচলাবস্থা এবং অবহেলার কারণে এসব সরকারি স্থাপনা ধীরে ধীরে ধ্বংসের মুখে।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘মহম্মাদপুর উপ-কারাগারটি বর্তমান সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন আছে, সেখানে আমাদের একজন কেয়ারটেকার আছেন। তিনি সেখানটা দেখভাল করেন। তবে সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র করার জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।’